মাদারীপুরে অজ্ঞাত খুনের রহস্য উদঘাটন ও মোটরসাইকেল চোরই চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

বাংলাদেশ
স্ত্রী নিপা আক্তারের সিজারের টাকা সংগ্রহ করতে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতেন মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর পাঁচখোলা গ্রামের আনোয়ার হোসেন খানের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম ইবু। গত ২৮ জুলাই ২০২০ তারিখে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রিয়াজুল তার মোটরসাইকেল নিয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে দুইজন যাত্রী নিয়ে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর থেকে তাঁর সাথে আর কোনো যোগাযেগ করা যাচ্ছিল না। রিয়াজুলকে খুঁজে না পেয়ে তার স্ত্রী নিপা আক্তার মাদারীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন।

 

জিডির সূত্র ধরে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ প্রথমেই মোটর সাইকেলের যাত্রীদ্বয়ের সন্ধানে নামে। পুলিশ রিয়াজুলের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডের তথ্য পর্যালোচনা করে মোটর সাইকেলের যাত্রী ১। হৃদয় মৃধা (২৮) ও ২। সুলতান মোল্লা (২৫) কে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে তাদেরকে রিয়াজুলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হতে যোগাযোগ করলে তারা তা এড়িয়ে যায়। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। ফলে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ হৃদয় ও সুলতান সম্পর্কে জানতে হৃদয়ের মা কামরুন নাহার বেগম (৪০) ও সুলতান মোল্লার ভাই জসিম মোল্লার সাথে কথা বলে।

 

 

বিষয়টি জানতে পেরে আসামি হৃদয় নিজের পরিচয় না দিয়ে পুলিশকে জানায় যে, রিয়াজুলের লাশ জাজিরা থানাধীন পশ্চিম নাওডোবা তস্তারকান্দি গ্রামের পদ্মা সেতুর রাস্তার পাশে শনের মধ্যে আছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩০ জুলাই ২০২০ তারিখ রিয়াজুলের মরাদেহ উদ্ধার করে জাজিরা থানা পুলিশ।

 

 

পরবর্তিতে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের সনাক্ত এবং গ্রেফতার করার লক্ষ্যে ব্যাপক তদন্ত চালায় শরীয়তপুর জেলার ডিবি পুলিশ। যার ফলশ্রæতিতে গত ০৩ আগস্ট ২০২০ তারিখ অত্র হত্যাকান্ডের মূল আসামি হৃদয় মৃধাসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ। সেই সাথে উদ্ধার করা হয় চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল, নিহত রিয়াজুলের মোবাইল ফোন এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আসামি রাজিব এর ব্যবহৃত মোটর সাইকেল।

 

 

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি আসামি হৃদয় এবং তার সহযোগী অপর আসামি সুলতান তাদেরকে মাওয়া ঘাটে পৌঁছে দেয়ার জন্য মোটর সাইকেল চালক রিয়াজুল ইসলাম ইবুর সাথে ৫০০/- টাকা ভাড়া ঠিক করে। মাওয়ার যাওয়ার পথে ঘটনাস্থল জাজিরা থানাধীন পশ্চিম নাওডোবা তস্তারকান্দি গ্রামের পদ্মা সেতুর ফাঁকা রাস্তার উপর এলে প্রশ্রাব করার কথা বলে রিয়াজুলকে থামতে বলে তারা। তাদের কথা অনুযায়ী সেখানে মোটরসাইকেল থামানোর সাথে সাথে পূর্ব হতে রাস্তার পাশে শনের ভিতরে অবস্থান করা আরও ০৪ জন পিছন হতে এসে রিয়াজুলের গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে শাসরোধ করে ও চোখে মুখে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে রিয়াজুলের শরীর নিস্তেজ হয়ে আসলে আসামিরা তাকে টেনে নিয়ে রাস্তার পাশে শনের মধ্যে ফেলে রেখে তার মোটর সাইকেল, মোবাইল ফোন ও সাথে থাকা নগদ ৩২০০/- টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

 

 

তদন্তে জানা যায় যে, আসামিরা একটি পেশাদার মোটরসাইকেল চোরই চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন এলাকা হতে কৌশলে মোটর সাইকল ভাড়া করে তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি সুবিধামত স্থানে নিয়া চালকে আহত করে, অথবা কখনও হত্যা করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *