বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস অনেক কৌতূহলপূর্ণ । প্রথম এই ভাবনাটি আসে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীনের মাথায় । তিনি বাংলা একাডেমিতে চাকরি করতেন এবং একসময় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন । তার সময়কালে প্রচুর বিদেশী বই সংগ্রহ করা হতো । তিনি মাঝে মধ্যে অনেক বই পড়তেন হঠাৎ তিনি Wonderful World of Books নামক একটি বই পড়তে গিয়ে দুটি শব্দের সাথে পরিচিত হোন । একটা হচ্ছে বুক এবং অন্যটি হচ্ছে ফেয়ার । বইয়ের প্রচার প্রসারের জন্য যে এই বইমেলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তিনি ঐ বই পড়েই বুঝলেন ।
তার কিছুদিন পর তিনি ইউনোসকোর শিশু-কিশোর গ্রন্থমালা উন্নয়নের কাজে একটি প্রকল্পে দিয়েছিলেন । তারপর তিনি ভাবলেন এগুলো নিয়ে তো একটা শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন যায় । তিনি সেটা করেছিলেনও তখনকার সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরি এবং বর্তমান ঢাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নিচতলায় ১৯৬৫ সালে । এটাই প্রথম বই মেলা বলা জানা যায় । কিন্তু তিনি আরও বড় ধরনের বইমেলার আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন এবং সেই সুযোগ পেয়ে যান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের মাধ্যেমে । তিনিও আয়োজনও করেন বইমেলার এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই , সরদার ফজলুল করিম । কিন্তু ঐ বইমেলায় একটা বড় মজার ঘটনা ঘটেছিল । সরদার জয়েনউদদীন একটি মজার জিনিসের আয়োজন করেছিলেন আর সেটা হচ্ছে মেলায় একটু গরুকে বেধে রেখে তার গায়ে লিখে দেওয়া হয়েছিল যে “আমি বই পড়ি না ” । এই কারণেই হয়ত বই বিক্রির পরিমাণও খুব ভাল হয়েছিল ।
সরদার জয়েনউদদীন ১৯৭২ সালে যখন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন তখন তিনি ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করেন । বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভে পর ১৯৭২ সালে কোনো একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয়নি । কিন্তু বাংলা একাডেমি ঠিক বাহিরের দেওয়ালে রুহুল আমিন নিজামী কিছু বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে বসেন । তাকে দেখে বসে যান চিত্তরঞ্জন সাহা এবং তাজুল ইসলামও । বড় ধরনের জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে । এবং সেটার উদ্বোধন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান । সেই দিন পূর্বের ঐ তিনজনসহ সাত-আটজন একাডেমির পূর্ব দেওয়ালের সামনে বই নিয়ে বসে যান । এর থেকে এই বিক্রির ধারাটা চলতে থাকে । কাজী মনজুরে মওলা সাহেব যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন তখন তিনি প্রথম “অমর একুশে গ্রন্থমেলার”র আয়োজন করেন । কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি কারণ এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রের মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুইজন নিহত হয় । কিন্তু ১৯৮৪ সাল থেকে আবার প্রতিবছর আয়োজিত হয় এই বইমেলা ।
দিন দিন এই বইমেলা বড় আকার ধারণ করতে থাকে । এবং দিন দিন লেখকদের লেখা এবং প্রকারশনীর পরিমানের সংখ্যা বাড়তেই থাকে । এর এটাই বিশ্বের একমাত্র বই মেলা যেটা নাকি পুরো মাসব্যাপি চলে এবং এখানে শুধু দেশি পাশাপাশি বিদেশি পাঠিকও এসে থাকেন ।